আজ শনিবার, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোর্সের কাছে হাতকড়া !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

স্বাভাবিকভাবেই সোর্সদের আলাদা একরকম দাপট থাকে। কারণ তাদের পেছনে থাকে প্রশাসন। এই সোর্সেরা চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার কাজে এবং মাদক নির্মূলসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিধনের লক্ষ্যে প্রশাসনকে সহায়তা করেন। তবে, জেলা গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাব-১১ সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় পরিচয়দানকারী এসকল সোর্সদের উপর প্রশাসন বেশি নির্ভর করাতে তারা নিজেরাই মাদক ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আসামীদের হাতে তারা হাতকড়াও পরায়!

সোর্সের নামধারী এসকল অপরাধীদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার হাসান, শাহীন, রফিক, পশ্চিম মাসদাইর বড় বাড়ির দিদার ওরফে পাগলা দিদার, পশ্চিম মাসদাইর খানকা মোড় এলাকার রমু, রিপন, মাবুল, তাজু ওরফে বিক্রমপুইরা তাজু, মাসদাইর বাজার এলাকার নাসির ওরফে কসাই নাসির, দাপা রেলষ্ট্রেশন এলাকায় ডিবির সোর্স পারভীন, পান্না, সুমন, সোহাগ, লালপুর এলাকার মান্নান ওরফে ফেন্সি মান্নান, বাদল,জাফর, তক্কারমাঠ এলাকার লিপি ওরফে হেরোইন লিপি, পাগলা নয়ামটি চিতাশাল এলাকার লিটন, নজরুল, আলী, জীবন মুন্না, আমির, আবু বকর, আমজাদ, বাবু ওরফে কেতরা বাবুু, রিপন ওরফে টুল্লু, কামাল, নিশাদ (কারাগারে) লিমন, কানা সজীব, মাছুম, মাহাবুব এনাম, সুমন, পারভেজ, রনি ওরফে পেচাঁ রনি, নন্দলালপুর এলাকার ডাকাত নয়ন, রনি, লাল খাঁ এলাকার কাইল্যা মাসুদ, শিবু, দেওভোগের আশরাফ, তল্লার নওফেল, কাউছার (কারাগারে), রামারবাগ এলাকার ইমন ওরফে ছোট ইমন, বুড়ির দোকান এলাকার ইমন ওরফে বড় ইমন, ধর্মগঞ্জের আলম, সাইদুল ও জাহাঙ্গীর। এছাড়াও রয়েছে বক্তাবলী এলাকার রাসেল, চাঁনমারী এলাকার দিলিপ, নাগবাড়ী এলাকার সুমন ওরফে ইয়াবা সুমন, বাবুরাইলের বাদশা, আলীগঞ্জের আইনুল, সল্টু রাসেল, শান্ত, নোয়াব আলী ও কবির। সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকার চি‎হ্নিত মাদক সম্রাট শাহীন, বন্দর এলাকার ইউনুছ, খাঁনপুর এলাকার মুন্নি ওরফে মোবাইল মুন্নি, ডিবির সোর্স আনোয়ার ও আলমগীর।

অভিযোগে রয়েছে, এক সময়ে থানা পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী প্রতিষ্ঠিত মাদক ব্যবসায়ী পারভিনকে মাদক সহ গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। দীর্ঘদীন ধরে কারাভোগের পর এখন নিজেকে নারায়নগঞ্জ জেলা ডিবি সোর্স পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে সে। তার বিরুদ্ধে ১ ডজনের বেশী মামলা রয়েছে। সে ডিবি পুলিশের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত লিপুর সাবেক স্ত্রী । বর্তমানে বন্দর এলাকার চিহ্নিত এক মাদক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে ফতুল্লা রেলষ্টেশন মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। উল্লেখিত নামধারী সোর্সদের সিংহ ভাগই নিজেদের সোর্স পরিচয় দিয়ে নিজ নিজ বলয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপকর্ম। পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তারা।

কিছুদিন পূর্বে ফতুল্লার কোতালেরবাগ এলাকায় মাদক বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় বাবু নামে বাবু নামের যুবককে পুলিশ দিয়ে হয়রানির অভিযোগে ফতুল্লা মডেল থানার এএসআই গাফফারকে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর আহত বাবুর স্ত্রী মাহিনুর বেগম থানায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও চার-পাঁচজনের নামে মামলা করেন। মাহিনুর বেগম বলেন, এএসআইর নির্দেশে সোর্সেরা তার স্বামীকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়। বাবুর ওপর হামলাকারীরা মাদক ব্যবসার পাশাপাশি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। মাদক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় পুলিশ সোর্স রাহাত, অপু, ওয়াইফাই সাগর (বর্তমানে জেলে) ও মজিবুর শনিবার কোতালেরবাগ ক্লাবের সামনের রাস্তায় মারধর করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্বামীকে তাদের সঙ্গে মাদক বিক্রি করতে বললে রাজি না হওয়ায় তাকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ডান-পা ভেঙে ফেলে।

চলতি বছর মে মাসে তল্লা এলাকার সোর্স নওফেল এক মাদক বিক্রেতাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। পরে বাড়ি থেকে টাকা আনানোর কথা বেলে ওই যুবককে বেধরক মারধর করে সে। মারতে মারতে ছেলেটির শরীরে নীলাফুলা জখম করে নওফেল। যদিও পরবর্তীতে তার কাছে মাদক পাওয়ার অভিযোগে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় তাকে। এমন আরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে নারায়ণগঞ্জের আনাচে-কানাচে।

জানা গেছে, এ সকল নামধারী সোর্সদের দিয়ে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাগী আসামী, অস্ত্র, জি.আর ও সি.আর ওয়ারেন্ট তামিলসহ বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সক্রিয়দের গ্রেপ্তারের জন্য সহায়তা কামনা করে থাকে। আর প্রশাসনকে তাদের আইনী কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তার নামে ঐ সকল সোর্স নামধারী কথিত সোর্সরা অপরাধীদের সাথে সখ্যতা অনেকটাই খোলামেলা রুপে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ সময় ওদেরকে নিয়ে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই ঘুড়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলি গলিতে।

সচেতন মহলের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়দানকারী উল্লেখিতরা অপরাধ নিমূলে প্রশাসনকে সহায়তা যতটুকুই করে, তাদের সাথে সখ্যতা রেখে তার চাইতেই বেশি অপরাধ কর্মকান্ড করে বেড়ায়। এ সব ক্ষেত্রে অনেক সময় ঐ সকল নামধারী সোর্সদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে জানালেও কোন লাভ হয়না বলে ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেন। ইতিপূর্বে উল্লেখিত সোর্সদের নানা কুট কৌশলের জালে পড়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হাজত বন্দি হতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষতে ঘায়েল করতে ঐ সোর্সদের মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় বলেও রয়েছে অভিযোগ।